লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে প্রায় ৩কোটি টাকা মূল্যের ২শত ৫০মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় মূলহোতা সেই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমকে হাতীবান্ধার দইখাওয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে সরকারি গুদামের চাল সরিয়ে নেয়ার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
এদিকে, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর গুদাম ও চাতালে লোপাট হওয়া সরকারি চাল উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম। এ সময় উপজেলার শুকানদিঘি এলাকার ব্যবসায়ী একরামুল হকের গুদাম থেকে ৩০মেট্রিক টন এবং রাতে তুষভাণ্ডার বাজারের পেট্রোল পাম্পে রাখা একটি ট্রাক থেকে সাড়ে ২৪মেট্রিক টনসহ মোট ৫৪মেট্রিক টন চাল উদ্ধার করা হয়। তুষভান্ডার বাজারের ইউনুস আলী আশরাফী নামের একজন ব্যবসায়ী চালগুলো অন্যত্র পাঠাতে ট্রাকটি ভাড়া করেছিলেন বলে জানা গেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা খাদ্য পরিদর্শক (ওসিএলএসডি) ফেরদৌস আলম গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ২৫টি ট্রলিযোগে গুদাম থেকে চাল সরিয়ে ফেলেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক গুদামে অভিযান চালান কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম। এ সময় চালের হিসাবে গরমিল ও গুদাম কর্মকর্তা লাপাত্তা থাকায় গুদাম সিলগালা করা হয়। চাল খোয়া যাওয়ার বিষয়টি তদন্তে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে ৪সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার। ওই কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সদস্য সচিব করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইমিতিয়াজ কবির বলেন, এ ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হকের দায়ের করা অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় কুড়িগ্রামে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) আটক খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা থানা হেফাজতে রয়েছেন।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্যরা ওই গুদাম পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন।
অপরদিকে, খাদ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও গুদামটি পরিদর্শন করেছেন।
কালীগঞ্জ নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, সরকারি চাল উদ্ধারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৫৪মেট্রিক টন চাল উদ্ধার করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, খাদ্য গুদামের চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে ৪সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করার পাশাপাশি চাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারি সম্পদ উদ্ধারে পুলিশ, জেলা প্রশাসনসহ আমরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি অভিযুক্ত খাদ্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।